শিশুকে ঘিরে মা-বাবার স্বপ্নের শেষ নেই। মা বলে তাকে ডাক্তার বানাবে কিন্তু
বাবা চায় ইঞ্জিনিয়ার বানাতে। সেই থেকে শুরু হয়, কামার যেমন লোহা পিটিয়ে
তিক্ষ্ণ হাতিয়ার তৈরি করে ঠিক তেমনি তাদের সন্তানদেরও হাতিয়ার বানানোর
চেষ্টা।
সেই চেষ্টাতে কোনো প্রকার ত্রুটি রাখতে
নারাজ তারা। কিন্তু মনের অজান্তেই এমন কিছু ভুল তারা করে, যার মাশুল দিতে
হয় আবার তাদেরকেই। নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে এ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়।
কারণ চলার পথে প্রতিনিয়ত নতুন পরিস্থিতির
মুখোমুখি হতে হয়। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনার সন্তান পাবে সুস্থ সুন্দর
পরিবেশ যা তার মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে-
১. শৈশব চোখের পলকেই
ফুরিয়ে যায়। আপনার শিশুর শৈশব ভরিয়ে দিন আপনার সংস্পর্শে। তার সঙ্গে খেলুন,
আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যান, দূরে কোথাও ঘুরে আসুন। সন্তানের সঙ্গে
আপনার সম্পর্ক যেন হয় বিশ্বাস আর ভালোবাসার।
২. সন্তানকে সততার শিক্ষা
দিন। দায়িত্ব সম্পর্কে বোঝান। বড়দের সম্মান করতে শেখান। তাকে বোঝান সব
কাজে ধৈর্য ধারণ করতে হয়। এসব শিক্ষার মাধ্যমে তার জীবনের মজবুত ভিত্তি
তৈরি হবে।
৩. অন্যদের সঙ্গে কীভাবে
মিশতে হয় তা শেখান। শিশুরা খেলার সময় কোনো সমস্যায় পড়লে তা তাদের সমাধান
করতে দিন। অন্যের মতের প্রতি কীভাবে সম্মান দেখাতে হয় তা শিক্ষা দিন।
৪. সন্তানকে খাওয়া, ঘুম, খেলার সময় নির্দিষ্ট করে দিন। এতে সে সময়ানুবর্তীতা শিখবে।
৫. সন্তানের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাকে নতুন নতুন বই উপহার দিন। একটা বই পড়া শেষ হলে তার কাছে বইটি সম্পর্কে জানতে চান।
৬. যে কোনো ভালো কাজের
জন্য তার প্রশংসা করুন, তা যতই ছোট হোক। খারাপ কাজের জন্য কখনো বকা দেবেন
না, বুঝিয়ে বলুন কাজটি কীভাবে করা উচিত ছিল।
৭. বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে
শিশুর একটি নিজস্ব জগৎ গড়ে ওঠে, তাতে আমাদের বাধা দেয়া উচিত নয়, বাধা
দেয়ার প্রয়োজন হলেও তার উপযোগী করে আমাদের বোঝানো উচিত, যাতে সে বুঝতে পারে
বিষয়টি।
৮. শিশুর মনে থাকে হাজার
প্রশ্ন, শিশু যখন তার জানার আগ্রহ প্রকাশ করে, তখন আমাদের উচিত শিশুদের
কৌতুহল মেটানো, তাদের প্রতি বিরক্ত প্রকাশ না করা, তারা যেন কোনো অবস্থাতেই
নিরুৎসাহিত বোধ না করে।
৯. শিশুকে পরিমিত আদর করতে হবে, অতিরিক্ত আদর ক্ষতিকর।
১০. শিশুর সব চাহিদা
সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করা ঠিক নয়। তার চাহিদা পূরণ করা বা না করার পেছনে যুক্তি
দিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে করে শিশু অতিরিক্ত জেদ করা শিখবে না এবং
বুঝতে শিখবে চাইলেই পাওয়া যায় না।
১১. নিজের রাগ বা বিরক্ত কখনই শিশুর উপর প্রকাশ করা ঠিক না।
১২. পারিবারিক বিষয়ে
রাগারাগি, হৈচৈ শিশুর সামনে করা উচিত নয়, বড়দের বিষয় নিয়ে ছোটদের সামনে কথা
বলা উচিত নয়। এতে শিশু এককেন্দ্রিক বা মানসিক প্রতিবন্ধীও হয়ে যেতে পারে।
১৩. শিশুদের চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
১৪. শিশুদের খেলনা নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। পিস্তল জাতীয় খেলনা না দিয়ে সৃজনশীল খেলার জিনিস দিতে হবে।
১৫. তাদেরকে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে না রেখে অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিলামেশার সুযোগ করে দিন। পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে দিন।
১৬. শিশুকে অযথা কোনো কিছুর লোভ দেখানো যাবে না।
১৭. তাদেরকে নিজের কাজ
নিজে করার অভ্যাস তৈরি করা উচিত। যেমন- নিজের কাপড় গোছানো, খেলনা গোছানো,
জুতা পরা, দাঁত মাজা, চুল আঁচড়ানো ইত্যাদি।
১৮. শিশুকে শুধুই আদর করতে হবে, শাসন করা যাবে না, এটা ঠিক নয়, তবে শাসনের ধরনটা এমন হওয়া উচিত যাতে সে বুঝতে পারে কেন শাসন করা হলো।
১৯. শিশুকে নির্দিষ্ট বয়সে স্কুলে পাঠান, নির্দিষ্ট বয়সের আগে বা পরে না।
২০. শিশুকে দল বেধে খেলার সুযোগ দিন, এতে সে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টা শিক্ষা লাভ করতে পারে।
আজকের শিশুর যত্ন নিয়ে ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করি- শিশুর মানসিক বিকাশকে গুরুত্ব দেই।
0 comments:
Post a Comment