ডায়রিয়া ছোটদের জন্য বেশ মারাত্মক। ডায়রিয়ার কারণে অনেক শিশুর মৃত্যু
পর্যন্ত হতে পারে। কেননা ডায়রিয়ার সময় বার বার পায়খানার সঙ্গে শরীর থেকে
প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে
অপুষ্টির সমস্যায় ভুগছে এমন শিশুর যদি ডায়রিয়া হয় তার অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর
হতে পারে। কারণ ডায়রিয়া হলে মলের সঙ্গে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায় এবং পুষ্টি
উপাদানেও ঘাটতি পড়ে।
এই ডায়রিয়া দুই রকমের হয়। এক. শুরু হওয়ার পর ২ বা ৩ দিন স্থায়ী হলে তাকে
সাময়িক ডায়রিয়া বলা যেতে পারে। দুই. দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল ৭
দিন থেকে ১৪ দিন বা এর চেয়েও বেশি হতে পারে। আর যদি পাতলা পায়খানার সঙ্গে
রক্ত মিশ্রিত থাকে, তবে সেটি ডায়রিয়া না হয়ে আমাশয়ও হতে পারে।
স্বাভাবিক পানিশূন্যতার রোগীরা বাড়িতেই চিকিৎসা নিতে পারে। তাদের
ক্ষেত্রে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর খাবার স্যালাইন খেতে হবে। পরিবারের
কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে হাতে বানানো স্যালাইন খাওয়ালে বেশি উপকার পাওয়া
যায়। এক্ষেত্রে আধা লিটার বিশুদ্ধ পানির ভেতর একমুঠো গুড় বা চিনি আর এক
চিমটি লবণ দিয়ে গুলিয়ে নিলেই হয়ে গেল স্যালাইন।
দুই বছরের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে
প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ৫০ থেকে ১০০ মিলিলিটার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
যে শিশুরা বুকের দুধ খায়, তাদের ক্ষেত্রে স্যালাইনের পাশাপাশি বুকের দুধ দিতে হবে।
একসঙ্গে পুরো স্যালাইন খেতে না পারলে অল্প অল্প করে স্যালাইন দিতে হবে।
দুই থেকে ৯ বছর পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে
১০০ থেকে ২০০ মিলিলিটার বা ১ কাপ স্যালাইন খাওয়াতে হবে প্রতিবার পায়খানার পর।
১০ বছর বা এর বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে
যতটুকু খেতে চায় সেই পরিমাণ খাওয়াতে হবে।
এসময় স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যেতে হবে।
যদি বমি করে, ১০ মিনিট অপেক্ষা করে আবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
ডায়রিয়া বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত স্যালাইনের পাশাপাশি অন্যান্য পানীয়ও দিতে হবে।
বেশি পানিশূন্যতায় করণীয়:
এ ধরনের রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়ার
পাশাপাশি জিংক ট্যাবলেট খেতে হবে। ছয় মাস বয়সের নিচে ২০ মি.গ্রা.-এর অর্ধেক
বড়ি প্রতিদিন একবার অল্প পানি (১ চা চামচ) অথবা বুকের দুধ অথবা স্যালাইনে
গুলিয়ে খাওয়াতে হবে ১৪ দিন। ছয় মাসের বেশি বয়সের ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি
করে জিংক বড়ি (২০ মি.গ্রা.) ১৪ দিন খাওয়াতে হবে।
সাময়িক ডায়রিয়ায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন হয় না। তবে
আমাশয় হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। অতিরিক্ত
আঁশ জাতীয় খাবার ডায়রিয়া চলাকালীন এড়িয়ে চলাই ভালো। এ সময় এ খাবারগুলো হজমে
সমস্যা হয়। বেশি চিনি মিশ্রিত খাবার ডায়রিয়ার সময় খেলে পাতলা পায়খানার
মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
0 comments:
Post a Comment